দেশেও মিশরের মতো গণবিস্ফোরণ ঘটতে পারে: মওদুদ


মিশরের মতো গণবিস্ফোরণ বাংলাদেশেও ঘটতে পারে বলে সরকারকে সতর্ক করেছেন বিএনপি নেতা মওদুদ আহমদ। তার মতে, সরকারের 'ব্যর্থতাই' এ পরিস্থিতি তৈরি করেছে। সরকারি দল চাইলে বিরোধী দলকে সংসদে ফেরাতে পারে বলেও মন্তব্য করেছেন তিনি।
মিশরের প্রেসিডেন্ট হোসনি মুবারকের দীর্ঘ শাসনামলের অবসানের প্রতি ইংগিত করে তিনি বলেন, "গণতন্ত্র যখন স্বৈরতন্ত্রে রূপান্তরিত হয়, তখন গণতন্ত্র থাকে না। তিউনিসিয়া, মিশরের মতো সুদান, জর্ডানসহ মধ্য প্রাচ্যের বিভিন্ন দেশের মানুষ আজ গণতন্ত্র চায়।"

দেশের বর্তমান পরিস্থিতি নিয়ে তিনি বলেন, "আজ দেশে গণতন্ত্রের নামে স্বৈরতন্ত্র চলছে। জনগণের ক্ষোভের বহিঃপ্রকাশ ঘটেছে আড়িয়ল বিলে। কেবল বিমানবন্দর নির্মাণের জন্য ওই বিস্ফোরণ হয়নি। এ রকম গণবিস্ফোরণের অবস্থা এখন দেশের সর্বত্র বিরাজমান। সে বিস্ফোরণ যে কোনো সময় ঘটতে পারে।"

প্রবল গণআন্দোলনের মুখে শুক্রবারই পদত্যাগ করেন মিশরের প্রেসিডেন্ট হোসনি মুবারক। এর মধ্য দিয়ে তার ৩০ বছরের শাসনের অবসান ঘটলো।

চলমান আন্দোলনকে ধীরে ধীরে একটি পর্যায়ে নিয়ে মহাজোট সরকারকে পদত্যাগে বাধ্য করার পরিকল্পনা নিয়ে বিএনপি এগোচ্ছে বলে জানান মওদুদ।

তিনি বলেন, "আমরা কোনো হঠকারি সিদ্ধান্ত নিয়ে আন্দোলন করার পক্ষে নই। সেজন্যই গত দুই বছরে বিএনপি মাত্র চারটি হরতালের কর্মসূচি দিয়েছে। আমরা সংযমের পরিচয় দিচ্ছি।"

সরকারের ব্যর্থতার সমালোচনা করে মওদুদ বলেন, "কেবল দেশের মানুষ নয়, আমার বন্ধু তোফায়েল আহমেদ, সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত, রাশেদ খান মেমন এবং এরশাদ সাহেবও আজ মহাজোট সরকারের মহাব্যর্থতার কথা তুলে ধরছেন।

"গত দুই বছরে কোনো রাস্তা-ঘাটের সংস্কার ও উন্নয়ন হয়নি বলে আমার বন্ধু তোফায়েল আহমেদ সাহস করে সে বিষয়ে কথা বলেছেন। এজন্য তাকে সাধুবাদ জানাই।"

পুঁজিবাজারে 'অস্বাভাবিক' দরপতনের সা¤প্রতিক ঘটনা, দ্রব্যমূল্য ও আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির নিয়ন্ত্রণে এ সরকার ব্যর্থ বলে দাবি করেন তিনি।

'নির্বাচনী অঙ্গীকার, বাস্তবতা ও বাংলাদেশের বর্তমান প্রেক্ষাপট' শীর্ষক ওই আলোচনা সভার আয়োজন করে 'সুশীল ফোরাম' নামে একটি সংগঠন।

সংগঠনের প্রধান উপদেষ্টা টিএম গিয়াস উদ্দিন আহমেদের সভাপতিত্বে আলোচনা সভায় অন্যদের মধ্যে আলোচনা করেন জামায়াতে ইসলামীর ঢাকা মহানগরের ভারপ্রাপ্ত আমির হামিদুর রহমান আযাদ, জাতীয় গণতান্ত্রিক পার্টির সভাপতি শফিউল আলম প্রধান, সাধারণ সম্পাদক লুৎফর রহমান, শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক রফিকুল ইসলাম, জিয়া পরিষদের ঢাকা মহানগর সভাপতি শফিকুল ইসলাম, সুশীল ফোরামের সভাপতি মো. জাহিদ প্রমুখ।

সংসদে ফেরা প্রসঙ্গ

সংসদে যোগদানে তার দলের আগ্রহের কথা প্রকাশ করে বিএনপির এই সংসদ সদস্য বলেন, "আমরা সংসদকে কার্যকর দেখতে চাই। বর্তমান সরকারের মানসিকতার কারণে আমরা সংসদে যাওয়ার আগ্রহ পাচ্ছি না। তারা ইচ্ছা করলেই আগামী ২৪ ঘণ্টার মধ্যে এমন পরিবেশ তৈরি করতে পারে- যাতে আমরা সংসদ যেতে পারি।"

'সদস্য পদ রক্ষায়' সংসদে ফিরে যাওয়ার বিষয়টি নাকচ করে তিনি বলেন, "এই অভিযোগ সঠিক নয়। আমরা সংসদে কার্যকর ভূমিকা রাখতে চাই। কিন্তু সরকার চায় না বিরোধী দল সংসদে আসুক। তাই তারা বিরোধী দলবিহীন একদলীয়ভাবে সংসদ পরিচালনা করছেন।"

ড. ইউনূস প্রসঙ্গ

গ্রামীণ ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মুহাম্মদ ইউনূসকে নিয়ে প্রধানমন্ত্রীসহ সরকারি দলের বিভিন্ন নেতার বক্তব্যের সমালোচনা করেন মওদুদ।

নোবেল বিজয়ী মুহাম্মদ ইউনূসের বিরুদ্ধে তহবিল স্থানান্তরসহ বিভিন্ন অভিযোগ তদন্ত সরকার 'প্রতিহিংসাবশত' করছে বলে অভিযোগ করেন তিনি।

মওদুদ বলেন, "দেশের নোবেল বিজয়ী অধ্যাপক ইউনূসকে বাদ দিয়ে প্রধানমন্ত্রী আরেকটি দেশের নোবেল বিজয়ী অমর্ত্য সেনকে দিয়ে তার নিজের বইয়ের মোড়ক উন্মোচন করিয়েছেন। এটা উচিত হয়নি। এর মাধ্যমে আমার দেশের গৌরবকে অসম্মান করা হয়েছে। অধ্যাপক ইউনূসকে শুধু রাজনৈতিক প্রতিহিংসার কারণে অসম্মানিত করে পুরো জাতিকে অপমানিত করা হচ্ছে।"

অর্থনীতিতে নোবেল বিজয়ী বাঙালি অমর্ত্যরেও শান্তিতে নোবেল জয়ী ইউনূসকে ছাড়া বাংলা একাডেমীর অনুষ্ঠানে যাওয়া উচিত হয়নি বলে মন্তব্য করেন মওদুদ।

সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি প্রতিষ্ঠায় মহানবী (সা.)


হজরত মুহাম্মদ (সা.) পৃথিবীর সর্বশ্রেষ্ঠ নবী ও সর্বোৎকৃষ্ট মানুষ। তিনি মানবজাতির জন্য এক মহান কল্যাণ ও সর্বশ্রেষ্ঠ নিয়ামত। আল্লাহ তায়ালা তাঁর রাসুল (সা.) সম্পর্কে বলেন, '(হে রাসুল!) আমি আপনাকে সারা জাহানের রহমত হিসেবে প্রেরণ করেছি।' (২১:১০৭) মহানবীকে (সা.) সর্বাধিক মানবিক গুণ ও সর্বোত্তম চরিত্রবিশিষ্ট করে মানবজাতির সামনে উপস্থাপন করা হয়েছে এ জন্য যে যাতে মানবতার জন্য অনন্য আদর্শ হিসেবে চিরকাল তিনি মানুষকে সত্য, সুন্দর ও মুক্তির পথে আহ্বান জানাতে পারেন। তিনি তাঁর নবুয়তি জীবনে একদিকে যেমন মানুষের আত্মিক উন্নতি তথা আল্লাহর সঙ্গে বান্দার সম্পর্কোন্নয়ন, অন্যদিকে এই পৃথিবীতে মানুষের সঙ্গে মানুষের পারস্পরিক সম্পর্ক কেমন হবে তারও শিক্ষা প্রদান করেছেন। তাঁর এই শিক্ষা যত দিন পর্যন্ত মানুষ যথাযথভাবে পালন করেছে, তত দিন দুনিয়ার বুকে শান্তি বিরাজ করেছে। আর যখনই মানুষ তার শিক্ষা থেকে দূরে সরে গেছে, তখনই দেখা দিয়েছে নানা সংকট ও সমস্যা। আধুনিক সমাজব্যবস্থায় যে সমস্যা বেশি লক্ষণীয় তা হচ্ছে মানুষে মানুষে সম্পর্ক। এ সম্পর্কের ক্ষেত্রে আজ গোত্র-রক্ত-বর্ণ-ধর্ম-ভাষা নানা প্রভাব ফেলছে অথচ প্রকৃত সত্য হচ্ছে সব ভাষা, গোত্র, বর্ণ ও ধর্মের মানুষ একই বংশজাত, তথা একই পিতা আদম (আ.) ও মা হাওয়া (আ.)-এর সন্তান। পবিত্র কোরআনে এরই সমর্থনে দ্ব্যর্থহীন ঘোষণা এসেছে_'হে মানুষ! আমি তোমাদের সৃষ্টি করেছি এক পুরুষ ও এক নারী হতে, পরে তোমাদের বিভক্ত করেছি বিভিন্ন জাতি ও গোত্রে, যাতে তোমরা একে অপরের সঙ্গে পরিচিত হতে পারো।' (৪৯:১৩)
রাসুল (সা.) আল্লাহপ্রদত্ত এ মূলনীতিকে উপজীব্য করে মানুষে মানুষে সাম্য-শৃঙ্খলা-ঐক্যের সমন্বয় সাধন করে সম্প্রীতির এক উজ্জ্বল ও অনুপম নিদর্শন রেখে গেছেন। হিজরতের পর মদিনায় প্রতিষ্ঠিত নগর রাষ্ট্রের জন্য ঘোষিত মদিনা সনদে তিনি এ নীতির সফল বাস্তবায়নও করেন। এটাই পৃথিবীর ইতিহাসে প্রথম লিখিত শাসনতন্ত্র। এর প্রথম শর্তেই ধর্ম-বর্ণ-গোত্র নির্বিশেষে একটি জাতিসত্তার কথা বলা হয়। যা জাতীয় ঐক্য ও সংহতি এবং সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি ও ভ্রাতৃত্বের ঔজ্জ্বল্যে বিভাসিত হয়। মদিনা সনদে ঘোষণা এসেছে_'মদিনায় ইহুদি, খ্রিস্টান, পৌত্তলিক ও মুসলিম সবাই এক দেশবাসী, সবার নাগরিক অধিকার সমান, সবাই নির্বিঘ্নে নিজ নিজ ধর্ম পালন করবে, কেউ কারো ধর্মে হস্তক্ষেপ করবে না।' মানব ইতিহাসে কল্যাণ রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির এ উদাহরণ এক বিরল ঘটনা। দুনিয়ার সব মানুষ একই আদমের সন্তান হিসেবে একে অপরের ভাই। তাই একজন আরেকজনের ওপর প্রভুত্ব করবে, একজন আরেকজনকে জুলুমের জাঁতাকলে নিষ্পেষণ নির্যাতন করবে_এটা তো মানবতাবিরোধী। আর বিশ্বনবীর এই পৃথিবীতে আগমনের উদ্দেশ্যে মূলত জুলুম-অত্যাচার দূরীভূত করে প্রকৃত ভ্রাতৃত্বের প্রতিষ্ঠা। আল্লাহ রাব্বুল আলামিন বলেছেন, 'অবশ্যই মুমিনরা পরস্পর ভাই ভাই। সুতরাং তোমার ভাইয়ের মধ্যে শান্তি স্থাপন করো, যাতে তোমরা রহমত পেতে পারো।' (সুরা হুজরাত-১০) রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, সব মুসলিম একে অন্যের ভাই। তিনি ঐতিহাসিক বিদায় হজ্জের ভাষণে বলেছেন, 'তোমরা সবাই আদম সন্তান। আর আদম মাটির তৈরি। একমাত্র তাকওয়া ছাড়া অনারবদের ওপর আরবদের আর আরবদের ওপর অনারবদের কোনো প্রাধান্য নেই' (বায়হাকী)। মহানবীর এই আদর্শে গোত্রভিত্তিক সমাজের কৃত্রিম আভিজাত্য বোধের মূলে কুঠারাঘাত করে এবং সংকীর্ণ সে সমাজ নির্মূল হয়ে বিশ্ব ভ্রাতৃত্ববোধে উজ্জীবিত হয়ে উদার সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতিভিত্তিক সমাজের উদ্ভব ঘটে। এ সম্পর্কে খুদা বক্স বলেন, The Immediate result of the prophet's teaching was the dissolution of the tribal system and the foundation of brotherhood of Islam. নবী (সা.)-এর শিক্ষার প্রত্যক্ষ ফল হলো গোত্রভিত্তিক সমাজের আধিপত্য বিলোপ সাধন করে ইসলামী ভ্রাতৃত্বে অনুপ্রাণিত সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির দেশ। তিনি কেবল আরববাসীদের মধ্যে কিংবা শুধু মুসলিম উম্মাহর মধ্যেই নয়, বরং জাতি-বর্ণ নির্বিশেষে বিশ্বের সব মানুষের মধ্যে সম্প্রীতি, শান্তি ও ভ্রাতৃত্ব স্থাপন করে দুনিয়ায় এক অক্ষয় আদর্শের প্রতিষ্ঠা করে গেছেন। তাঁর আদর্শের মূল ভিত্তি হলো ধর্ম, জাতি, দেশ ভিন্ন হলেও সব মানুষ মূলত একই পরিবারভুক্ত। মুসলিম, অমুসলিম সব বৈষম্যের অবসান ঘটিয়ে তিনি উদাত্ত কণ্ঠে ঘোষণা করেন_অমুসলিমের জান ও মাল এবং আমাদের জান ও মাল এক ও অভিন্ন। তিনি আরো বলেন_যে মুসলিম অমুসলিম সংখ্যালঘু সম্প্রদায়কে সামান্য জুলুম করবে তার বিরুদ্ধে আমি কেয়ামতের দিন আল্লাহর দরবারে অভিযোগ আনব। মূলত মহানবী (সা.)-এর আদর্শে অনুপ্রাণিত হয়ে হিন্দু, মুসলিম, বৌদ্ধ, খ্রিস্টান-ইহুদি-পারসিক এবং আরবি-অনারবি, আফগানি-ইরানি-তুর্কি-কাফ্রি-সাদা-কালো-চীনা ইউরোপীয় বিশ্বের সব দেশ ও জাতির লোককে একত্র করে একই মিলন সূত্রে আবদ্ধ করে মহাশান্তি প্রতিষ্ঠার প্রয়াস পেয়েছে। তাই একজন খ্রিস্টান ধর্মানুসারীর কথায় তার প্রতিফলন লক্ষণীয়। যেমন মাইকেল হার্ট তাঁর 'দ্য হানড্রেড' গ্রন্থে দ্বিধাহীনচিত্তে উল্লেখ করেছেন_He (Muhammad) was the only man in history who was supremely on both the religious and secular level...- It is this unparalleled combination of secular and religious influence which I feel entitles Muhammad to be considered the most influential single figure in history. রক্ত ও বর্ণের পার্থক্যের জন্য যুগে যুগে দেশে দেশে বহু দ্বন্দ্ব-সংঘাত ঘটেছে, সংঘটিত হয়েছে বহু ভয়াবহ যুদ্ধ, নিকট অতীতেও হয়েছে এখনো হচ্ছে। যেমন_বাবরী মসজিদকে কেন্দ্র করে সাম্প্রদায়িক দাঙ্গার সবচেয়ে হৃদয়বিদারক সংঘাত হয়েছে ভারতের গুজরাটে। যাতে হাজার হাজার নারী, পুরুষ ও শিশুর রক্তের স্রোতে মাঠ-ঘাটের চেহারা বিবর্ণ হয়ে গিয়েছিল এবং লাশের গন্ধে আকাশ-বাতাস হয়েছিল ভারী। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে চীনের জিনজিয়া প্রদেশ, মিসর, ইন্দোনেশিয়া ও কিরগিজিস্তানেও সাম্প্রদায়িক ও জাতিগত দাঙ্গায় অনেক তাজা প্রাণের মূল্য দিতে হয়েছে। কিন্তু মহানবী (সা.) ইসলামের মর্মবাণীর আলোকে সম্প্রদায়ে সম্প্রদায়ে রক্ত বর্ণের শ্রেষ্ঠত্বের দাবিতে যে সাম্প্রদায়িকতা, তার মূলোচ্ছেদ করেছেন। ইহুদিদের নবী হজরত মুসাকে (আ.) প্রিয় নবী (সা.) যখন সত্য নবী হিসেবে ঘোষণা দেন, তাদের কিতাব তাওরাতকে যখন আল্লাহর কিতাব হিসেবে ঘোষণা দেন। অনুরূপ খ্রিস্টানদের নবী ঈসা (আ.) এবং তাদের কিতাব ইঞ্জিলকে যখন আল্লাহর নবীও বাণীরূপে ঘোষণা দেন। আরো ঘোষণা দেন সব নবী ও সব কিতাবকে সত্য বলে। তখন তাদের প্রতি হিংসা-বিদ্বেষ, তাদের সঙ্গে ঝগড়া-বিবাদ সৃষ্টি, নবী ও কিতাবের বিভিন্নতার কারণে তাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধবিগ্রহে লিপ্ত হওয়ার কোনো প্রশ্নই ওঠে না। এমনকি ঝগড়া-বিবাদ করতেও নিষেধ করা হয়েছে। পবিত্র কোরআনে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে_'আহলি কিতাবদের সঙ্গে বিতর্কে অবতীর্ণ হবে না আর হলেও তা করবে অতীব উত্তমভাবে।' (২৯:৪৬) আসলে নবী করিম (সা.) গড়ে তুলতে চেয়েছেন তাদের সঙ্গে সম্প্রীতি ও সৌহার্দ্যের সম্পর্ক, বিভিন্নতা সত্ত্বেও সত্যের স্বীকৃতি দিয়ে বৃহত্তর মানবীয় ঐক্য প্রতিষ্ঠা করতে। অথচ তাদের কিতাব ও নবীদের সত্য বলে মানা সত্ত্বেও তারা বিদ্বেষবশত হজরত মুহাম্মদ (সা.)-কে আল্লাহর নবী এবং কোরআনকে আল্লাহর কিতাব বলে স্বীকৃতি দেয়নি। তারা বৃহত্তর ভ্রাতৃত্ব গড়ে তোলার আহ্বানকে অগ্রাহ্য করে বিশ্বনবী (সা.), কোরআন এবং মুসলিম উম্মাহকে ধ্বংস করার জন্য বারবার আঘাত হেনেছে। এতদসত্ত্বেও মহানবী (সা.) ও তাঁর সাহাবিরা এবং তাঁর উম্মতরা ইতিহাসের কোনো অধ্যায়ই সাম্প্রদায়িকতার পরিচয় দেননি। পরিচয় দিয়েছেন নিজেদের উদারতার, মহত্ত্বের ও মহানুভবতার, প্রচেষ্টা চালিয়ে গেছেন সৌহার্দ্য ও সম্প্রীতি স্থাপনের। ইতিহাসে এর দৃষ্টান্ত অসংখ্য ও অগণিত। বিভিন্ন ধর্ম সম্প্রদায়ের লোককে একই সমাজে, একই রাষ্ট্রে কিভাবে মিলেমিশে বসবাস করতে হবে_এ হচ্ছে তার এক শাশ্বত দলিল। পরমতসহিষ্ণুতা, উদারতা, মহানুভবতা এবং বিভিন্নতার মধ্যেও ঐক্য হচ্ছে প্রিয় নবীর আদর্শ ও ইসলামের অনুপম বৈশিষ্ট্য। আল্লাহর কিতাব তাওরাত ও ইঞ্জিলে যেসব বিবৃতি সাধন করা হয়েছে, রাসুলুল্লাহ (সা.) তার অনেকই ইহুদি, খ্রিস্টানকে দেখিয়ে দিয়েছেন। তাদের সংশোধন হতে বলেছেন, সত্যের দিকে আহ্বান জানিয়েছেন। তারা সে আহ্বানে কর্ণপাত না করলেও তাদের সঙ্গে বিবাদে লিপ্ত হননি এবং তাদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করেছেন। এমনি করে খায়বার বিজয়ের পরে প্রিয় নবী (সা.) বিজিত ভূমির ইহুদি অধিবাসীদের সম্পূর্ণ স্বাধীনভাবে তাদের স্ব-স্ব ধর্ম পালনের অধিকার প্রদান করেছিলেন। এমনকি মদিনায় রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন ইহুদিদের বাড়ি-ঘর ও ধন-সম্পত্তি আগের মতোই যার যার অধিকারে রেখে দিয়েছিলেন। প্রিয় নবী (সা.) এমন এক যুগসন্ধিক্ষণে পৃথিবীতে আবির্ভূত হন, যখন হানাহানি-কাটাকাটি-খুনাখুনি মহামারি আকার ধারণ করে, কোথাও শান্তি বলতে কিছুই ছিল না, নৈরাশ্য ও নৈরাজ্যে নিপতিত ছিল মানবসভ্যতা। সেই করুণ অবস্থা থেকে মানবতাকে উদ্ধার করতে, আসসিরাতুল মুস্তাকীমে মানবসভ্যতাকে সংস্থাপন করতে, মানুষে মানুষে বিবাদ-বিসংবাদ দূর করে সত্যিকার সম্প্রীতি ও ভ্রাতৃত্ব প্রতিষ্ঠা করতে তিনি তাশরিফ আনলেন। তিনি এলেন মানব জাতিকে শান্তি ও সুখের পথে পরিচালিত করতে। আমরা আরো লক্ষ করি যে যখন মক্কার কাফির মুশরিকরা তাঁর আহ্বানে সাড়া না দিয়ে তাঁর বিরুদ্ধে নানা ধরনের ষড়যন্ত্রের জাল বিস্তার করছে, তখনো তিনি ধৈর্য ও সহিষ্ণুতা অবলম্বন করে সম্প্রীতি ও ভ্রাতৃত্বের কথা বলেছেন এবং মদিনা মনুওয়ারায় হিজরত করার পরও তারা কিছু মুনাফিক ও ইহুদিদের সঙ্গে যোগসাজশ করে বারবার মদিনা আক্রমণ করেছে। তবুও মহানবী ৬২৮ খ্রিস্টাব্দে বৃহত্তর সম্প্রীতি ও শান্তি প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে হোদায়বিয়ার সন্ধি করেছেন। যদিও সন্ধির কিছু ধারা মুসলমানদের অনুকূলে ছিল না। রাসুলুল্লাহ (সা.) বিশ্ববাসীর সামনে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির এই যে নজির রেখেছেন তা যেমন বিশ্বজনীন, তেমনি কেয়ামত অবধি সর্বকাল ও সর্বসময়ের জন্য তা প্রযোজ্য। তাই বিশ্ববাসী সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি প্রতিষ্ঠার জন্য সর্বকালে সর্বযুগের মহান শিক্ষক হজরত মুহাম্মদ (সা.)-এর প্রদর্শিত পন্থাই একমাত্র সমাধান। যা তিনি সপ্তম শতাব্দীতে মদিনায় কল্যাণ রাষ্ট্র স্থাপনের মাধ্যমে বাস্তবায়ন করেছেন। তাই আমাদের উচিত হবে মানবতার মহান শিক্ষক মহানবী (সা.) তাঁর সমগ্র জীবনে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি ও ভ্রাতৃত্ব স্থাপনে যে নীতি অবলম্বন করেছেন, আমরাও যেন তা থেকে শিক্ষা নিয়ে বর্তমান সংঘাতময় পৃথিবীতে শান্তির মশাল জ্বালাতে পারি এবং আহ্বান জানাতে পারি সম্প্রীতির, ঐক্যের ও মানব প্রেমের।

নতুনরূপে ফেইসবুক


ফ্যানপেইজের ব্যবহার বাড়াতে নতুন ডিজাইন চালু করেছে সামাজিক যোগাযোগের সাইট ফেইসবুক কর্তৃপক্ষ। নতুন ডিজাইনে ব্যবহারকারী নিজের ফেইসবুক অ্যাকাউন্টে লগ-ইন না করেই আলাদাভাবে ফেইসবুক পেইজে লগ-ইন করার সুযোগ পাবেন।
ফেইসবুক কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, গত বছরের ডিসেম্বর মাস থেকে নতুন ফিচারটি নিজেদের মধ্যে পরীক্ষামূলকভাবে ব্যবহার করা হচ্ছে। ফেইসবুক পেইজের পুরো লেআউটই পরিবর্তন করা হয়েছে। বামপাশের 'Editing Page' অপশনটি উঠিয়ে নেওয়া হয়েছে। নতুন নেভিগেশন মেন্যু এবং ট্যাবিং সিস্টেম চালু করা হয়েছে। একই সঙ্গে পেইজ সম্পর্কে আরো বিস্তারিত তথ্য যোগ করার জন্য কয়েকটি অপশন যুক্ত করা হয়েছে। নতুন 'পেইজ' পদ্ধতিতে ব্যবহারকারীরা ফেইসবুক পেইজকে অ্যাকাউন্ট হিসেবে ব্যবহার করতে পারবেন। এ ক্ষেত্রে প্রোফাইল ট্যাবে ক্লিক করলে পেইজের প্রোফাইল দেখাবে। আর পেইজকে ট্যাগ করা সাম্প্রতিক ছবিগুলো ওপরে দেখা যাবে। সম্প্রতি চালু করা নতুন ফেইসবুক প্রোফাইলেও একই রকম লেআউট রয়েছে। পেইজ 'অ্যাডমিন'রা ফেইসবুকে লগ-ইন করে www.facebook.com/pages/status থেকে নিজের পেইজ আপগ্রেড করে নিতে পারবেন এবং পেইজ হিসেবে ফেইসবুকে লগ-ইন করতে পারবেন।

ধনী হতে স্বামী-স্ত্রী মিলে শুরু করে শিশু অপহরণ


ধনী হওয়ার জন্য শিশু অপহরণ করত আবদুল মতিন (মফিজ) (৫৫)। আর তাকে সহযোগিতা করেছে তারই স্ত্রী মরিয়ম বেগম। বিভিন্ন জেলায় নিজেকে ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী পরিচয় দিয়ে বাড়ি ভাড়া নিত মতিন। ভালো ব্যবহারের মাধ্যমে বাড়ির লোকদের খুব কাছে চলে যেত, অল্প সময়ে হয়ে উঠত আপনজন। পরে সুযোগ বুঝে সেই বাড়ির শিশুকে নিয়ে পালিয়ে যেত, আর দাবি করত মোটা অঙ্কের মুক্তিপণ। মতিনের টার্গেট ছিল দুই বছরের কম বয়সী শিশু। কারণ এ বয়সের শিশুরা কথা বলতে পারে না, এমনকি পালানোরও কোনো চেষ্টা করে না।
শিশু অপহরণের অভিযোগে গ্রেপ্তার হয়ে টাঙ্গাইল মির্জাপুর থানার পুলিশের জিজ্ঞাসাবাদে আবদুল মতিন এসব কথা জানায়। গত ১৮ জানুয়ারি টাঙ্গাইলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার জামিল হাসানের নেতৃত্বে পুলিশের একটি টিম অভিযান চালিয়ে মুক্তিপণের এক লাখ টাকাসহ টাঙ্গাইলের কালিহাতী উপজেলার এলেঙ্গা থেকে আবদুল মতিনকে গ্রেপ্তার করে। মতিনের স্বীকারোক্তি অনুযায়ী, একই উপজেলার মসিন্দা এলাকার আরেকটি ভাড়া বাড়ি থেকে অপহৃত শিশুকে উদ্ধার করা হয়। ওই বাড়ি থেকে গ্রেপ্তার করা হয় আবদুল মতিনের স্ত্রী মরিয়ম বেগমকে (৪৬)।
পুলিশ জানায়, আবদুল মতিনের বাড়ি সিরাজগঞ্জ সদর উপজেলার চক্কপ দাসপাড়া গ্রামে। পারিবারিক অবস্থা ভালো নয়, আর্থিক অনটনের মধ্যে দিন কাটে। কখনো দিনমজুরি, কখনো ফেরি করে নিজের সংসার চালাত। কিন্তু ধনী হওয়ার প্রবল ইচ্ছা ছিল তার। শহরে জায়গা কিনতে হবে_বাড়ি করতে হবে। আর কিভাবে ধনী হওয়া যায়? ধনী হওয়ার নেশায় পেয়ে বসে মতিনকে। কোনো উপায় না দেখে মাথায় আসে শিশু অপহরণের কথা। কম পরিশ্রম করে বেশি টাকা পাওয়ার উপায়। যেমন চিন্তা তেমন কাজ। আর দেরি না করে শুরু করে শিশু অপহরণ।
প্রথম ১৯৯১ সালে রংপুর শহরের দেড় বছরের একটি শিশুকে অপহরণ করে ৫০ হাজার টাকা মুক্তিপণ দাবি করে আবদুল মতিন। চিঠির মাধ্যমে মুক্তিপণের টাকার জন্য ওই পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগ করত। সফল হতে পারেনি সে। গ্রেপ্তার হয় পুলিশের হাতে। ছয় বছরের কারাদণ্ড হয়। ১৯৯৬ সালে মুক্তি পায়। কারাভোগ করার পরও সে ধনী হওয়ার ইচ্ছা ছাড়েনি। গত ৪ জানুয়ারি টাঙ্গাইলের মির্জাপুরের গোড়াই থেকে আবার ১১ মাসের এক শিশু অপহরণ করে মুক্তিপণ দাবি করে পাঁচ লাখ টাকা। এবারও সফল হতে পারেনি আবদুল মতিন। ১৪ দিন পর গ্রেপ্তার হয় পুলিশের হাতে।
যেভাবে অপহরণ করা হয় : গত বছরের ডিসেম্বর মাসের মাঝামাঝি মির্জাপুর উপজেলার গোড়াইয়ে আবদুল লতিফের বাড়িতে এসে একটি রুম ভাড়া নেয়। নিজেকে পরিচয় দেয় ক্ষুদ্র কাপড় ব্যবসায়ী হিসেবে। নাম জানায় মফিজ। মির্জাপুরে কোথাও একটি দোকান ভাড়া নেওয়ার জন্য খুঁজছে। স্ত্রীকে নিয়ে সেখানে থাকে। নিয়মিত নামাজ পড়ে, শব্দ করে কোরআন তেলাওয়াত করে। নামাজ পড়তে বলে ওই বাড়ির লোকদের। সকালে কাপড়ের গাঁট (ব্যাগ) নিয়ে বেরিয়ে যায়। আবদুল লতিফের ছোট নাতি নয়ন। বয়স ১১ মাস। তাকে দাদুমণি বলে ডাকত আবদুল মতিন (মফিজ)। মাঝেমধ্যে চকোলেট এনে দিত_ভীষণ আদর করত। কয়েক দিনের মধ্যে বাড়ির সবার কাছে বিশ্বস্ত ও আপন হয়ে ওঠে সে।
গত ৪ জানুয়ারি সকালে নয়নকে কোলে নিয়ে বাড়ির বাইরে বের হয়। তার দুদিন আগে মতিনের স্ত্রী সেখান থেকে চলে যায়। সকাল ১০টার দিকে নয়নের দাদা আবদুল লতিফের কাছে ফোন করে মতিন বলে, 'নয়নকে নিয়ে আইছি। ওরে পাইতে হলে দশ লাখ টাকা লাগব। আমি কাপড়ের ব্যবসা করি না। নয়নরে নেবার জন্যই আইছিলাম।' এ কথা শুনে আবদুল লতিফের মাথায় আকাশ ভেঙে পড়ে। অস্থির হয়ে ওঠেন বাড়ির সবাই। ছুটে যান মির্জাপুর থানা পুলিশের কাছে।
যেভাবে গ্রেপ্তার হয় : মির্জাপুর থানার ওসি হাবিবুল্লাহ সরকার এ খবর শোনার পরপরই টাঙ্গাইলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার জামিল হাসানকে জানান। আবদুল মতিন (মফিজ) নয়নের দাদা ও বাবাকে মোবাইল ফোনে বারবার টাকার তাগিদ দিতে থাকে। নয়নের আত্মীয় সেজে ওসি হাবিবুল্লাহ সরকার মতিনের সঙ্গে ফোনে বিভিন্ন সময় কথা বলেন। তিনি মতিনকে জানান, তারা গরিব মানুষ, এত টাকা কিভাবে দেবেন? পরে মতিন টাকার পরিমাণ কমিয়ে পাঁচ লাখ বলে। এদিকে পুলিশ মতিনের খোঁজ করতে মরিয়া হয়ে ওঠে। টাঙ্গাইলের মধুপুরের দীঘরবাড়িতে মতিনের সন্ধান মিলতে পারে খবর পেয়ে পুলিশ, ডিবি, র‌্যাব দীঘরবাড়িতে টানা তিন রাত অভিযান চালিয়েও তার সন্ধান পায়নি। হঠাৎ জানতে পারে এলেঙ্গার কোথাও থেকে মতিন ফোনে কথা বলছে। তখন পুলিশ এলেঙ্গাকে টার্গেট করে জাল ফেলে।
অন্যদিকে ফোনে সব সময় মতিনের সঙ্গে যোগাযোগ হচ্ছে তাদের সঙ্গে। শেষ পর্যন্ত এক লাখ টাকার বিনিময়ে শিশুকে ফেরত দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দেয় মতিন। তবে শর্ত দেয়, তার কথামতো ট্রেনে করে ঈশ্বরদী যাওয়ার পথে কোথাও টাকাটা ট্রেনের ডান পাশের জানালা দিয়ে ফেলতে হবে। ১৭ জানুয়ারি রাতে ওসি হাবিবুল্লাহ সরকার কয়েকজনকে নিয়ে ট্রেনে ওঠেন। এলেঙ্গার দক্ষিণে পৌলির কাছাকাছি আসার পর মতিন ফোন করে টাকাটা জানালা দিয়ে নিচে ফেলতে বলে। ওসি হাবিবুল্লাহ সরকার কৌশল করে কথা বলে চার-পাঁচ মিনিট সময় দেরিতে টাকা ফেলেন। অতিরিক্ত পুলিশ সুপার জামিল হাসানের নেতৃত্বে পৌলির আশপাশের সব সড়কের মোড় ঘিরে ফেলা হয়। সারা রাত তারা একইভাবে সেখানে অবস্থান করে। ভোর ৬টার দিকে এক ব্যক্তিকে একটি ব্যাগ নিয়ে আসতে দেখে পুলিশের সঙ্গে থাকা নয়নের বাবা তাকে চিনতে পারেন। সঙ্গে সঙ্গে তাকে এক লাখ টাকাসহ গ্রেপ্তার করা হয়। পরে পাশের মসিন্দা গ্রামের একটি বাড়ি থেকে শিশু নয়নকে উদ্ধার এবং তার স্ত্রী মরিয়ম বেগমকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। অপহরণের আগের দিন ওই বাড়ির একটি ঘর সে ভাড়া নেয়। নয়নকে তাদের নাতি বলে পরিচয় দেয়। গ্রেপ্তারের আগে সারা রাত সে ধানক্ষেতে বসে ছিল বলে পুলিশকে জানায়।
অতিরিক্ত পুলিশ সুপার জামিল হাসানের বক্তব্য : আবদুল মতিন অর্থাৎ মফিজকে গ্রেপ্তার করতে নানা কারণে খুব বেগ পেতে হয়েছে। এখানে সে সফল হলে হয়তো মসিন্দার ওই বাড়ির কোনো শিশু তার পরবর্তী টার্গেট হতো। কারো সম্পর্কে না জেনেশুনে বাড়ি ভাড়া দেওয়া একেবারে ঠিক নয়। কাগজে ভাড়াটিয়াদের হাতে লেখা ঠিকানা এবং এক কপি ছবি রেখে বাড়ি ভাড়া দেওয়া উচিত।
গ্রেপ্তারের পর পাঁচ দিনের রিমান্ড শেষে আবদুল মতিন (মফিজ) ও তার স্ত্রী মরিয়ম আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছে। তারা এখন জেলহাজতে রয়েছে বলে জানান তদন্তকারী কর্মকর্তা ইন্সপেক্টর আবু ওবায়দা খান।

আশরাফুল ছয় নম্বরে, শাহরিয়ার নেই



ম্যাচের আগের দিন অনুশীলন দেখেও আঁচ করা যায়। গতকাল চট্টগ্রামের জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়ামে শাহরিয়ার নাফীস ও নাঈম ইসলামের একা একা অনুশীলন দেখেই বোঝা যাচ্ছিল, এ দুজন জেমি সিডন্সের 'মিশন কানাডা' চিন্তায় নেই। তিনি শুধু আটকে আছেন মোহাম্মদ আশরাফুল ও রকিবুল হাসানের মধ্য থেকে কাকে খেলাবেন, সে সিদ্ধান্তে। একটু দম নিয়ে পরের লাইনটা পড়ুন। এ মুহূর্তে আশরাফুলেই বাজি ধরছেন বাংলাদেশ কোচ। তবে চারে নয়, ছয় নম্বরে তাঁকে খেলাবেন জেমি। চার নম্বরে ইনিংসটাকে নিজের ঘরের মতোই সুসজ্জিত করে তুলবেন মুশফিকুর রহিম_এ আশা কোচের।
জেমি সিডন্স যে অসম্ভব ভালো ব্যাটিং কোচ, এ ব্যাপারে তাঁর ঘোর শত্রুও আপত্তি তোলেন না। এ অস্ট্রেলীয়র সততার ব্যাপারে সন্দিহান খুব কম লোকই। তবে যদি বিতর্কিত কথাবার্তার প্রসঙ্গ ওঠে, তাহলে বাংলাদেশ কোচের ঘনিষ্ঠজনও নিশ্চুপ হয়ে যান। কারণ, এটা-ওটা বলে ঘোঁট পাকানোয় বাংলাদেশে আসা বিদেশি কোচদের শিরোমণি যে জেমি! যেমন ১৫ জনের বিশ্বকাপ স্কোয়াড ঘোষণার কয়েক দিনের মাথায়ই মোহাম্মদ আশরাফুল ও শাহরিয়ার নাফীসকে জানিয়ে দেন, 'তোমরা ব্যাক আপ প্লেয়ার'। সে থেকে শাহরিয়ারের না-বোঝার কথা নয় যে, কেউ ব্যর্থ হলে পরেই বিশ্বকাপের মাঠে নামা হবে তাঁর। দোদুল্যমানতায় ছিলেন আশরাফুলও। তবে গত কয়েক দিনের নেটে রকিবুলের তুলনায় আশরাফুলকেই নাকি ভালো মনে হয়েছে কোচের। অনুশীলনের এ ব্যবধান থেকেই কানাডা ম্যাচের জন্য আশরাফুলের পক্ষে ভোট দিয়েছেন জেমি, 'আশরাফুল ও রকিবুলের মধ্য থেকে কোনজনকে খেলাব, তা ভাবছি। আশরাফুলের খেলার সম্ভাবনাই বেশি।'
আশরাফুলই খেলছেন। তবে ছয় নম্বরে। বাংলাদেশ দলের মাথা ব্যথার কারণ হয়ে ওঠা ব্যাটিং পাওয়ার প্লে সমস্যার সম্ভাব্য সেরা সমাধান খুঁজতে গিয়েই হয়তো আশরাফুলকে নিজের 'গুডবুক'-এ তুলে এনেছেন জেমি সিডন্স, 'শেষ পাওয়ার প্লে নিয়ে অনেক অনুশীলন করেছি। দেখা যাক ম্যাচে সেটা কাজে দেয় কি-না। যদি বেশি কিছু রান আসে।'
গত এক বছরের আশাব্যঞ্জক নৈপুণ্যের ফাঁকফোকরে বিস্তর সমস্যাও জমে আছে। মাশরাফি বিন মুর্তজার অনুপস্থিতিতে নতুন বল 'অপব্যবহার' না হয়ে যায়, এমন আশঙ্কা আরো বেড়েছে। প্রস্তুতি ম্যাচ আইনের সুবিধা নিয়ে তাই আজ স্কোয়াডের তিন পেসারকেই খেলাচ্ছেন বাংলাদেশ কোচ, 'শফিউল ও রুবেলের সঙ্গে নাজমুলও খেলবে।' উদ্দেশ্যটা পরিষ্কার, 'তারা যেন ভালো বোলিং করে রাজ্জাক ও সাকিবের ওপর নির্ভরতা কমাতে পারে।' নতুন বলের বোলারদের ব্যর্থতায় প্রথম ১০ ওভারে নিদেনপক্ষে আবদুর রাজ্জাকের আক্রমণে আসাটা অন্তত কানাডা ম্যাচে দেখতে চান না জেমি, 'প্রথম ১০ ওভারে পেসারদের ভালো বোলিং করতে হবে। ইনিংসের পরের অংশে ওদের লাইন-লেন্থটাও কম দুশ্চিন্তার নয়।' চট্টগ্রামের ধীরগতির উইকেটে তিন পেসারের 'পরীক্ষা'টা খুব সহজ না-ও হতে পারে। সেটা আরো কঠিন করে দিচ্ছে উইকেটে সামান্য ঘাসের উপস্থিতি, যা নিয়ে জেমি সিডন্সের প্রবল আপত্তি, 'উইকেটে এত ঘাস দেখতে আমার মোটেও ভালো লাগে না। আশা করি, আরেকবার ঘাস কাটা হবে।' তার মানে আরো নিস্তেজ উইকেটে বল করতে হবে শফিউল-রুবেলদের। তার ওপর স্পিনের বিপক্ষে আজন্ম দুর্বল কানাডিয়ানরা যে রান করার জন্য বাংলাদেশি পেসারদেরই 'টার্গেট' বানাবেন, সেটা বলার অপেক্ষা রাখে না।
পরীক্ষা তো আশরাফুলেরও। বাংলাদেশের বিশ্বকাপ স্বপ্নের কেন্দ বিন্দুতে যাঁর থাকার কথা, সেই তিনি কি-না 'ব্যাক আপ প্লেয়ার'! নির্বাচকদের দৃষ্টিতেও যিনি দেশের সেরা ১৫ ক্রিকেটারের একজন, সেরা একাদশের অনিবার্য নন। অপাত্রে না উগড়ে আজ কানাডা ম্যাচই মনের ভেতরে জমে থাকা অভিমানের স্রোতে ভাসিয়ে দিন না কেন আশরাফুল। ইতিহাস বলে সুযোগ আসবে শাহরিয়ার নাফীসের সামনেও। গত বিশ্বকাপের প্রস্তুতি ম্যাচে কানাডার বিপক্ষে সেঞ্চুরি করেছিলেন এ বাঁহাতি। আজকের ম্যাচটা ড্রেসিংরুমে বসে দেখতে দেখতে তিনিও স্মৃতির আয়নায় ফিরিয়ে আনুন ২০০৬ সালের আত্মবিশ্বাস। তাহলেই হয়তো তাঁর নেটের ব্যাটিংকেও মনে ধরবে কোচের। যেমনটা আজ আশরাফুলের ব্যাটিংয়ে শেষ পাওয়ার প্লে সমস্যার সমাধান খুঁজছেন জেমি সিডন্স।

আজ যাঁরা খেলবেন
ইমরুল কায়েস, তামিম ইকবাল, জুনায়েদ সিদ্দীক, মুশফিকুর রহিম, সাকিব আল হাসান, মোহাম্মদ আশরাফুল, মাহমুদ উল্লাহ, আবদুর রাজ্জাক, সোহরাওয়ার্দী শুভ, রুবেল হোসেন, নাজমুল হোসেন, শফিউল ইসলাম
প্রস্তুতি ম্যাচে খেলতে পারেন ১২ জন

পাকিস্তান দল ঢাকায়


সবার আগে কানাডা। দুই দিন পর আজ শুক্রবার ঢাকা এসেছে পাকিস্তান ক্রিকেট দল। রাত আটটার দিকে হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে এসে পৌঁছান শহীদ আফ্রিদিরা।
বিশ্বকাপের গ্রুপ পর্বে বাংলাদেশে কোনো খেলা নেই পাকিস্তানের। তবে এখানে রয়েছে দুটি প্রস্তুতি ম্যাচ। দলটির সব কটি খেলাই অনুষ্ঠিত হবে শ্রীলঙ্কায়। আগামী ১৫ ফেব্রুয়ারি মিরপুর শেরেবাংলা স্টেডিয়ামে প্রথম প্রস্তুতি ম্যাচে পাকিস্তান লড়বে স্বাগতিক বাংলাদেশের বিপক্ষে। ১৮ ফেব্রুয়ারি ফতুল্লায় অনুষ্ঠিত হবে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে দ্বিতীয় প্রস্তুতি ম্যাচটি।
পাকিস্তান দল: শহীদ আফ্রিদি (অধিনায়ক), মিসবাহ-উল-হক, মোহাম্মদ হাফিজ, কামরান আকমল, ইউনুস খান, আসাদ শফিক, সাঈদ আজমল, উমর গুল, উমর আকমল, আবদুল রাজ্জাক, আবদুর রেহমান, ওয়াহাব রিয়াজ, শোয়েব আখতার, জুনায়েদ খান ও আহমেদ শেহজাদ|

 শচীনের অপেক্ষায় পন্টিং



একজন ক্রিকেটার গোটা জীবনে যা যা অর্জন করার স্বপ্ন দেখেন, বিশ্বকাপ জয়ের স্বাদ নেওয়া ছাড়া তার প্রায় সবই পেয়ে গেছেন শচীন টেন্ডুলকার। রেকর্ডের দিক থেকে তাঁর ধারেকাছেও কেউ নেই। তার পরও বর্তমান সময়ের ক্রিকেটারদের মধ্যে তুলনা করতে গেলে আসবে রিকি পন্টিংয়ের নাম।
আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে সবচেয়ে বেশি রানের মালিক শচীন। শচীনের ঠিক পরেই আছেন পন্টিং, ব্যবধানটা অবশ্য অনেক। তবে ক্রিকেটবিশ্ব যে এই দুজনের লড়াই দেখার প্রতীক্ষায় আছে, তা বলার অপেক্ষা রাখে না। অপেক্ষায় আছেন পন্টিংও, শচীনের জাদুকরি ব্যাটিং দেখার। ‘ওর খেলা দারুণ উপভোগ করি আমি। শচীন ও তাঁর দলের বিপক্ষে খেলার সুযোগের অপেক্ষায় থাকি’—আজ শুক্রবার এক সংবাদ সম্মেলনে বলেছেন পন্টিং।
দুজনের জন্যই শেষ বিশ্বকাপ এটি। প্রত্যেকে চাইবেন, দেশকে বিশ্বকাপ এনে দিয়ে শেষটা চিরস্মরণীয় করে রাখতে। এই চাওয়াটা হয়তো একটু বেশিই থাকবে শচীনের। বর্ণিল ক্যারিয়ারে এই একটা শিরোপা ছাড়া উল্লেখযোগ্য কিছুই যে আর অধরা নেই! কিন্তু শচীনের স্বপ্ন পূরণ হলে পন্টিংকে হতাশায় ডুবতে হবে—বাস্তবতা এটাই। বিষয়টি মাথায় রেখে পন্টিং বলেছেন, ‘আমি নিশ্চিত, একটা সফল প্রতিযোগিতার অপেক্ষায় শচীন। আমি এও নিশ্চিত, বিশ্বকাপজয়ী দলের সদস্য হতে চাইবে ও। আশা করছি, শচীন এটা পারবে না!’
পন্টিংকে স্বার্থপর ভাববেন না। নিষ্ঠুর বাস্তবতা হলেও লড়াইয়ের ধরনটাই এমন। ব্যক্তিগত ভালো লাগা-মন্দ লাগা বিবেচ্য নয় এখানে। দেশের স্বার্থটাই আসল। শচীনের খেলা ভালোবাসেন, ব্যক্তিগত সম্পর্কও ভালো, কিন্তু শচীন বিশ্বকাপ শিরোপা নিয়ে মেতে উঠেবেন, এমনটা কামনা করবেন না পন্টিং। তার পরও দীর্ঘদিনের বন্ধুত্ব থেকেই পন্টিং বলছেন, ‘সম্ভবত এটাই শচীনের শেষ বিশ্বকাপ। সম্ভবত আমারও। একে অপরের বিপক্ষে বছরের পর বছর খেলে ভাগ্যবান আমরা। আগামী কয়েক সপ্তাহও আমরা উপভোগ করব।’