দেশেও মিশরের মতো গণবিস্ফোরণ ঘটতে পারে: মওদুদ
মিশরের মতো গণবিস্ফোরণ বাংলাদেশেও ঘটতে পারে বলে সরকারকে সতর্ক করেছেন বিএনপি নেতা মওদুদ আহমদ। তার মতে, সরকারের 'ব্যর্থতাই' এ পরিস্থিতি তৈরি করেছে। সরকারি দল চাইলে বিরোধী দলকে সংসদে ফেরাতে পারে বলেও মন্তব্য করেছেন তিনি।
মিশরের প্রেসিডেন্ট হোসনি মুবারকের দীর্ঘ শাসনামলের অবসানের প্রতি ইংগিত করে তিনি বলেন, "গণতন্ত্র যখন স্বৈরতন্ত্রে রূপান্তরিত হয়, তখন গণতন্ত্র থাকে না। তিউনিসিয়া, মিশরের মতো সুদান, জর্ডানসহ মধ্য প্রাচ্যের বিভিন্ন দেশের মানুষ আজ গণতন্ত্র চায়।"
দেশের বর্তমান পরিস্থিতি নিয়ে তিনি বলেন, "আজ দেশে গণতন্ত্রের নামে স্বৈরতন্ত্র চলছে। জনগণের ক্ষোভের বহিঃপ্রকাশ ঘটেছে আড়িয়ল বিলে। কেবল বিমানবন্দর নির্মাণের জন্য ওই বিস্ফোরণ হয়নি। এ রকম গণবিস্ফোরণের অবস্থা এখন দেশের সর্বত্র বিরাজমান। সে বিস্ফোরণ যে কোনো সময় ঘটতে পারে।"
প্রবল গণআন্দোলনের মুখে শুক্রবারই পদত্যাগ করেন মিশরের প্রেসিডেন্ট হোসনি মুবারক। এর মধ্য দিয়ে তার ৩০ বছরের শাসনের অবসান ঘটলো।
চলমান আন্দোলনকে ধীরে ধীরে একটি পর্যায়ে নিয়ে মহাজোট সরকারকে পদত্যাগে বাধ্য করার পরিকল্পনা নিয়ে বিএনপি এগোচ্ছে বলে জানান মওদুদ।
তিনি বলেন, "আমরা কোনো হঠকারি সিদ্ধান্ত নিয়ে আন্দোলন করার পক্ষে নই। সেজন্যই গত দুই বছরে বিএনপি মাত্র চারটি হরতালের কর্মসূচি দিয়েছে। আমরা সংযমের পরিচয় দিচ্ছি।"
সরকারের ব্যর্থতার সমালোচনা করে মওদুদ বলেন, "কেবল দেশের মানুষ নয়, আমার বন্ধু তোফায়েল আহমেদ, সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত, রাশেদ খান মেমন এবং এরশাদ সাহেবও আজ মহাজোট সরকারের মহাব্যর্থতার কথা তুলে ধরছেন।
"গত দুই বছরে কোনো রাস্তা-ঘাটের সংস্কার ও উন্নয়ন হয়নি বলে আমার বন্ধু তোফায়েল আহমেদ সাহস করে সে বিষয়ে কথা বলেছেন। এজন্য তাকে সাধুবাদ জানাই।"
পুঁজিবাজারে 'অস্বাভাবিক' দরপতনের সা¤প্রতিক ঘটনা, দ্রব্যমূল্য ও আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির নিয়ন্ত্রণে এ সরকার ব্যর্থ বলে দাবি করেন তিনি।
'নির্বাচনী অঙ্গীকার, বাস্তবতা ও বাংলাদেশের বর্তমান প্রেক্ষাপট' শীর্ষক ওই আলোচনা সভার আয়োজন করে 'সুশীল ফোরাম' নামে একটি সংগঠন।
সংগঠনের প্রধান উপদেষ্টা টিএম গিয়াস উদ্দিন আহমেদের সভাপতিত্বে আলোচনা সভায় অন্যদের মধ্যে আলোচনা করেন জামায়াতে ইসলামীর ঢাকা মহানগরের ভারপ্রাপ্ত আমির হামিদুর রহমান আযাদ, জাতীয় গণতান্ত্রিক পার্টির সভাপতি শফিউল আলম প্রধান, সাধারণ সম্পাদক লুৎফর রহমান, শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক রফিকুল ইসলাম, জিয়া পরিষদের ঢাকা মহানগর সভাপতি শফিকুল ইসলাম, সুশীল ফোরামের সভাপতি মো. জাহিদ প্রমুখ।
সংসদে ফেরা প্রসঙ্গ
সংসদে যোগদানে তার দলের আগ্রহের কথা প্রকাশ করে বিএনপির এই সংসদ সদস্য বলেন, "আমরা সংসদকে কার্যকর দেখতে চাই। বর্তমান সরকারের মানসিকতার কারণে আমরা সংসদে যাওয়ার আগ্রহ পাচ্ছি না। তারা ইচ্ছা করলেই আগামী ২৪ ঘণ্টার মধ্যে এমন পরিবেশ তৈরি করতে পারে- যাতে আমরা সংসদ যেতে পারি।"
'সদস্য পদ রক্ষায়' সংসদে ফিরে যাওয়ার বিষয়টি নাকচ করে তিনি বলেন, "এই অভিযোগ সঠিক নয়। আমরা সংসদে কার্যকর ভূমিকা রাখতে চাই। কিন্তু সরকার চায় না বিরোধী দল সংসদে আসুক। তাই তারা বিরোধী দলবিহীন একদলীয়ভাবে সংসদ পরিচালনা করছেন।"
ড. ইউনূস প্রসঙ্গ
গ্রামীণ ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মুহাম্মদ ইউনূসকে নিয়ে প্রধানমন্ত্রীসহ সরকারি দলের বিভিন্ন নেতার বক্তব্যের সমালোচনা করেন মওদুদ।
নোবেল বিজয়ী মুহাম্মদ ইউনূসের বিরুদ্ধে তহবিল স্থানান্তরসহ বিভিন্ন অভিযোগ তদন্ত সরকার 'প্রতিহিংসাবশত' করছে বলে অভিযোগ করেন তিনি।
মওদুদ বলেন, "দেশের নোবেল বিজয়ী অধ্যাপক ইউনূসকে বাদ দিয়ে প্রধানমন্ত্রী আরেকটি দেশের নোবেল বিজয়ী অমর্ত্য সেনকে দিয়ে তার নিজের বইয়ের মোড়ক উন্মোচন করিয়েছেন। এটা উচিত হয়নি। এর মাধ্যমে আমার দেশের গৌরবকে অসম্মান করা হয়েছে। অধ্যাপক ইউনূসকে শুধু রাজনৈতিক প্রতিহিংসার কারণে অসম্মানিত করে পুরো জাতিকে অপমানিত করা হচ্ছে।"
অর্থনীতিতে নোবেল বিজয়ী বাঙালি অমর্ত্যরেও শান্তিতে নোবেল জয়ী ইউনূসকে ছাড়া বাংলা একাডেমীর অনুষ্ঠানে যাওয়া উচিত হয়নি বলে মন্তব্য করেন মওদুদ।
এতে সদস্যতা:
মন্তব্যগুলি পোস্ট করুন (Atom)
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন