আশরাফুল ছয় নম্বরে, শাহরিয়ার নেই
ম্যাচের আগের দিন অনুশীলন দেখেও আঁচ করা যায়। গতকাল চট্টগ্রামের জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়ামে শাহরিয়ার নাফীস ও নাঈম ইসলামের একা একা অনুশীলন দেখেই বোঝা যাচ্ছিল, এ দুজন জেমি সিডন্সের 'মিশন কানাডা' চিন্তায় নেই। তিনি শুধু আটকে আছেন মোহাম্মদ আশরাফুল ও রকিবুল হাসানের মধ্য থেকে কাকে খেলাবেন, সে সিদ্ধান্তে। একটু দম নিয়ে পরের লাইনটা পড়ুন। এ মুহূর্তে আশরাফুলেই বাজি ধরছেন বাংলাদেশ কোচ। তবে চারে নয়, ছয় নম্বরে তাঁকে খেলাবেন জেমি। চার নম্বরে ইনিংসটাকে নিজের ঘরের মতোই সুসজ্জিত করে তুলবেন মুশফিকুর রহিম_এ আশা কোচের।
জেমি সিডন্স যে অসম্ভব ভালো ব্যাটিং কোচ, এ ব্যাপারে তাঁর ঘোর শত্রুও আপত্তি তোলেন না। এ অস্ট্রেলীয়র সততার ব্যাপারে সন্দিহান খুব কম লোকই। তবে যদি বিতর্কিত কথাবার্তার প্রসঙ্গ ওঠে, তাহলে বাংলাদেশ কোচের ঘনিষ্ঠজনও নিশ্চুপ হয়ে যান। কারণ, এটা-ওটা বলে ঘোঁট পাকানোয় বাংলাদেশে আসা বিদেশি কোচদের শিরোমণি যে জেমি! যেমন ১৫ জনের বিশ্বকাপ স্কোয়াড ঘোষণার কয়েক দিনের মাথায়ই মোহাম্মদ আশরাফুল ও শাহরিয়ার নাফীসকে জানিয়ে দেন, 'তোমরা ব্যাক আপ প্লেয়ার'। সে থেকে শাহরিয়ারের না-বোঝার কথা নয় যে, কেউ ব্যর্থ হলে পরেই বিশ্বকাপের মাঠে নামা হবে তাঁর। দোদুল্যমানতায় ছিলেন আশরাফুলও। তবে গত কয়েক দিনের নেটে রকিবুলের তুলনায় আশরাফুলকেই নাকি ভালো মনে হয়েছে কোচের। অনুশীলনের এ ব্যবধান থেকেই কানাডা ম্যাচের জন্য আশরাফুলের পক্ষে ভোট দিয়েছেন জেমি, 'আশরাফুল ও রকিবুলের মধ্য থেকে কোনজনকে খেলাব, তা ভাবছি। আশরাফুলের খেলার সম্ভাবনাই বেশি।'
আশরাফুলই খেলছেন। তবে ছয় নম্বরে। বাংলাদেশ দলের মাথা ব্যথার কারণ হয়ে ওঠা ব্যাটিং পাওয়ার প্লে সমস্যার সম্ভাব্য সেরা সমাধান খুঁজতে গিয়েই হয়তো আশরাফুলকে নিজের 'গুডবুক'-এ তুলে এনেছেন জেমি সিডন্স, 'শেষ পাওয়ার প্লে নিয়ে অনেক অনুশীলন করেছি। দেখা যাক ম্যাচে সেটা কাজে দেয় কি-না। যদি বেশি কিছু রান আসে।'
গত এক বছরের আশাব্যঞ্জক নৈপুণ্যের ফাঁকফোকরে বিস্তর সমস্যাও জমে আছে। মাশরাফি বিন মুর্তজার অনুপস্থিতিতে নতুন বল 'অপব্যবহার' না হয়ে যায়, এমন আশঙ্কা আরো বেড়েছে। প্রস্তুতি ম্যাচ আইনের সুবিধা নিয়ে তাই আজ স্কোয়াডের তিন পেসারকেই খেলাচ্ছেন বাংলাদেশ কোচ, 'শফিউল ও রুবেলের সঙ্গে নাজমুলও খেলবে।' উদ্দেশ্যটা পরিষ্কার, 'তারা যেন ভালো বোলিং করে রাজ্জাক ও সাকিবের ওপর নির্ভরতা কমাতে পারে।' নতুন বলের বোলারদের ব্যর্থতায় প্রথম ১০ ওভারে নিদেনপক্ষে আবদুর রাজ্জাকের আক্রমণে আসাটা অন্তত কানাডা ম্যাচে দেখতে চান না জেমি, 'প্রথম ১০ ওভারে পেসারদের ভালো বোলিং করতে হবে। ইনিংসের পরের অংশে ওদের লাইন-লেন্থটাও কম দুশ্চিন্তার নয়।' চট্টগ্রামের ধীরগতির উইকেটে তিন পেসারের 'পরীক্ষা'টা খুব সহজ না-ও হতে পারে। সেটা আরো কঠিন করে দিচ্ছে উইকেটে সামান্য ঘাসের উপস্থিতি, যা নিয়ে জেমি সিডন্সের প্রবল আপত্তি, 'উইকেটে এত ঘাস দেখতে আমার মোটেও ভালো লাগে না। আশা করি, আরেকবার ঘাস কাটা হবে।' তার মানে আরো নিস্তেজ উইকেটে বল করতে হবে শফিউল-রুবেলদের। তার ওপর স্পিনের বিপক্ষে আজন্ম দুর্বল কানাডিয়ানরা যে রান করার জন্য বাংলাদেশি পেসারদেরই 'টার্গেট' বানাবেন, সেটা বলার অপেক্ষা রাখে না।
পরীক্ষা তো আশরাফুলেরও। বাংলাদেশের বিশ্বকাপ স্বপ্নের কেন্দ বিন্দুতে যাঁর থাকার কথা, সেই তিনি কি-না 'ব্যাক আপ প্লেয়ার'! নির্বাচকদের দৃষ্টিতেও যিনি দেশের সেরা ১৫ ক্রিকেটারের একজন, সেরা একাদশের অনিবার্য নন। অপাত্রে না উগড়ে আজ কানাডা ম্যাচই মনের ভেতরে জমে থাকা অভিমানের স্রোতে ভাসিয়ে দিন না কেন আশরাফুল। ইতিহাস বলে সুযোগ আসবে শাহরিয়ার নাফীসের সামনেও। গত বিশ্বকাপের প্রস্তুতি ম্যাচে কানাডার বিপক্ষে সেঞ্চুরি করেছিলেন এ বাঁহাতি। আজকের ম্যাচটা ড্রেসিংরুমে বসে দেখতে দেখতে তিনিও স্মৃতির আয়নায় ফিরিয়ে আনুন ২০০৬ সালের আত্মবিশ্বাস। তাহলেই হয়তো তাঁর নেটের ব্যাটিংকেও মনে ধরবে কোচের। যেমনটা আজ আশরাফুলের ব্যাটিংয়ে শেষ পাওয়ার প্লে সমস্যার সমাধান খুঁজছেন জেমি সিডন্স।
আজ যাঁরা খেলবেন
ইমরুল কায়েস, তামিম ইকবাল, জুনায়েদ সিদ্দীক, মুশফিকুর রহিম, সাকিব আল হাসান, মোহাম্মদ আশরাফুল, মাহমুদ উল্লাহ, আবদুর রাজ্জাক, সোহরাওয়ার্দী শুভ, রুবেল হোসেন, নাজমুল হোসেন, শফিউল ইসলাম
প্রস্তুতি ম্যাচে খেলতে পারেন ১২ জন
এতে সদস্যতা:
মন্তব্যগুলি পোস্ট করুন (Atom)
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন